অবৈধ সম্পদ-অর্থপাচার দুদকের জালে কর কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ৪:০১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০২৪

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

ছয় কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৫৪৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২৬ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার ৭৭৩ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগে সাবেক কর কমিশনার আ. জা. মু. জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

গত ১৪ মার্চ দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। বুধবার (১৯ মার্চ) দুদক সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।

 

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, আসামির সম্পদ বিবরণী বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান করে তার বিরুদ্ধে ছয় কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৫৪৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক।

 

আরও জানা যায়, অভিযুক্ত জিয়াউল হক তার স্ত্রী মোর্শেদা কুদ্দুসের কাছ থেকে বড় মগবাজারে ৫৩ শতাংশ জমি হেবা মূলে পেয়েছেন বলে দুদককে জানান। মোর্শেদার ভাই আব্দুল রকিব কাজমী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী অবস্থায় ২০১৪ সালে বড় মগবাজারের একতলা দালানসহ ওই জমি তার বোনের নামে হেবা দলিল করে দেন।

 

রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, পরবর্তী সময়ে ওই জমি তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জিয়াউল হকের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন তার স্ত্রী। সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষিত ফি বই মোতাবেক যার হেবা দলিল মূল্য ২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোর্শেদা কুদ্দুস তার মৃত্যু পথযাত্রী ভাই আব্দুল রকিব কাজমীর কাছ থেকে কুমিল্লায় এক কোটি টাকা মূল্যের আরও একটি জমি ২০১৪ সালে হেবা দলিল মূলে প্রাপ্ত হন, যা তার আম-মোক্তার কর্তৃক রেজিস্ট্রি করা হয়। মোর্শেদা ছাড়া তার ভাই মৃত আব্দুল রকিব কাজমী তার স্ত্রী, সন্তান বা অন্য কোনো ভাই-বোনকে এই পরিমাণ বা কোনো সম্পত্তি মৃত্যুর আগে হেবা বা দান হিসেবে দেননি। এতে অনুমিত হয় যে, অভিযুক্ত জিয়াউল হক তার অবৈধ অর্থ দ্বারা নানা কৌশলে ওই জমি ক্রয় এবং সব শেষে নিজের দখলে নেন।

 

আরও জানা যায়, জমি দাতার স্ত্রী বা সন্তানের আলোচ্য হেবা দলিল দানের বিষয়ে কোনো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। ফলে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত আসামি তার শ্যালকের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ওই জমি স্ত্রীর নামে হেবা দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর হলেও এখানে আর্থিক বিনিময় হয়েছে, যার পরিমাণ আনুমানিক ৩০ কোটি টাকার বেশি।

 

এজহার সূত্রে জানা যায়, জিয়াউল হক দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে (২০০৫ ও ২০০৬ সালে) ঋণ নিয়ে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের প্লট নম্বর-৩, রোড নম্বর-৩ এর বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে দুদককে জানান। দুদকের অনুসন্ধানে ওই ঋণ পরিশোধের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

আসামি জিয়াউল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ধার করেছেন মর্মে উল্লেখ করলেও দেশের ঋণদাতাদের কোনো ঠিকানা বা আয়কর নথি নম্বর কোথাও উল্লেখ করেননি। ওই অর্থ অপরিশোধিত ধরে নিলে তা তার দায় হিসাবে সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন করেননি। ফলে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ ধার করার নামে অর্থপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানের চেষ্টা করেছেন।

 

এছাড়া আসামি তার ধারের টাকায় উত্তরায় সাততলা বাড়ি নির্মাণ, ব্যাংকে ডিপোজিট করাসহ বিবিধ আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানালেও অনুসন্ধানে এর প্রমাণ পায়নি দুদক।

 

দুদকের অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি জিয়াউল পৈত্রিক সূত্রে তিন কাঠা পরিমাণ পুকুর পেয়েছেন মর্মে ১৯৯২-৯৩ সালের আয়কর নথিতে ঘোষণা করেছেন। তার আয়কর নথিতে মাঝে মাঝে মৎস্য চাষ থেকে আয় প্রদর্শন করেছেন। তার বাণিজ্যিকভাবে এই মৎস্য চাষের বিপরীতে বিনিয়োগ বা মৎস্য চাষ চলমান রাখার কোনো ধারাবাহিকতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মৎস্য চাষের পক্ষে কোনো মৎস্য কর্মকর্তার সনদও নেই। ফলে এ খাতে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের তথ্য সত্য নয়

মর্মে প্রতীয়মান হয়।