ভোট না দিলে যে সকল দেশে শাস্তি

প্রকাশিত: ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২৪

 

বাংলাদেশ টাইমস ডেস্ক

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের মত প্রকাশের সবচেয়ে বড় পদ্ধতি হলো ভোট। জনগণ চাইলে এই হাতিয়ার ব্যবহার করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সাধারণত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ভোট দিয়ে থাকেন নাগরিকরা। তারা চাইলে ভোট দেন, আবার না চাইলে দেন না। তবে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে ভোট দেওয়া আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর ভোট না দিলে রয়েছে শাস্তির বিধান।

২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পৃথিবীর ২১টি দেশে এ সংক্রান্ত আইনের কথা জানা যায়। যদিও এর প্রয়োগ হয় ১০ দেশে।

ইতিহাস বলছে, ভোটদান বাধ্যতামূলক করে আইন পাসকারী প্রথম দেশ বেলজিয়াম। ইউরোপের দেশটি ১৮৯৩ সালে পুরুষ এবং ১৯৪৮ সালে নারীদের জন্য এই বাধ্যতামূলক আইনটি পাস করে। ১৯২৪ সালে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের নাগরিকদের ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক করে। পরবর্তীতে এই দুটি দেশের দেখানো পথে অনেক দেশই এই আইন করেছে।

আর্জেন্টিনা: ১৯১২ সালের প্রথম দিকে আর্জেন্টিনায় বাধ্যতামূলক ভোটদান আইন চালু হয়। ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী সব নাগরিকের জন্য আর্জেন্টিনায় ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক, ব্যর্থ হলে দিতে হয় জরিমানা। নিয়ম লঙ্ঘনকারীরা এক বছর সরকারি কোনো পদে থাকতে পারেন না। ভোট দিতে ব্যর্থ হলে শুধু অসুস্থতা বা ভোটকেন্দ্র থেকে দূরত্বের মতো কারণ উল্লেখ করা যায়। এর বাইরে ছাড় নেই।

অস্ট্রেলিয়া: ১৯২৪ সালে অস্ট্রেলিয়া বাধ্যতামূলক ভোট দেওয়ার আইন করে। প্রথমবার ভোট দিতে ব্যর্থ হলে অস্ট্রেলিয়ান ২০ ডলার জরিমানা করা হয়। আর এরপর থেকে এই জরিমানা বেড়ে হয় ৫০ ডলার।

অস্ট্রেলিয়ান নির্বাচন কমিশন অনুসারে, এই জন্য কেউ চাইলে আদালতে যেতে পারেন। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত সর্বোচ্চ ২২২ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা গুণতে হতে পারে।

বেলজিয়াম: ভোট না দিলে এই দেশে ৮০ ইউরো থেকে ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতো। আর কেউ যদি পর পর চারটি নির্বাচনে ভোট দিতে ব্যর্থ হলে ১০ বছরের জন্য তার ভোটাধিকার বাতিল করা হয়।

ব্রাসেলস টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, অনুপস্থিতদের তালিকা পাবলিক প্রসিকিউটরদের অফিসে না পাঠানোর কারণে ভোট না দেওয়ার অপরাধ করা নাগরিকদের বিচার পাওয়ার ঘটনা কমে এসেছে।

ব্রাজিল: ১৯৩২ সালের সংবিধান অনুসারে ব্রাজিলে ভোট দেওয়া শুধু একটি অধিকার নয়। বরং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

১৮-৭০ বছরের নাগরিকদের ভোট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৬ বছরের বেশি ও ১৮ বছরের কম বয়সী এবং যারা পড়তে বা লিখতে পারে না তারা ভোট দিতে পারে বা নাও পারে।

ভোট না দিলে এই দেশে ন্যূনতম বেতনের ৩-১০% এর মধ্যে জরিমানা করার আইন রয়েছে। এছাড়া পাসপোর্ট বা আইডি পাওয়া, সরকারি চাকরি, সরকারি নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ হারানো ও সরকারি ঋণ পাওয়াও নিষিদ্ধ করার মতো শাস্তি রয়েছে।

ইকুয়েডর: ১৯৪৭ সাল থেকে পুরুষ ও ১৯৬৮ সালে উভয় লিঙ্গের জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়েছে। তবে ১৬-১৮ বছর বয়সী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক নয়। ভোট না দিলে দেশটির নাগরিকরা বহু নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

লিচেনস্টাইন: এই দেশে ভোট না দেওয়া ব্যক্তিকে এটির যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়। এমনকি কর্তৃপক্ষ জরিমানাও করতে পারে।

লুক্সেমবার্গ: এখানে নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। ৭৫ বছরের বেশি বয়সীরা বৈধ অজুহাত দেখালে বা দূরে থাকলে কিছুটা ছাড় দেওয়া হতে পারে।

প্রথমবার ভোট দিতে ব্যর্থ হলে ১০০-২৫০ ইউরো জরিমানা করা হয়। আর এর পর থেকে এই জরিমানা বেড়ে হয় ৫০০-১,০০০ ইউরো।

যদিও ১৯৬৪ সালের পর সেখানকার প্রশাসন ভোট না দেওয়ার কোনো ঘটনা পায়নি।

নাউরু: ১৯৬৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান দখলের পর থেকে নাউরুতে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। ১৯৬৭ সালে স্বাধীনতার পরেও ২০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। যথাযথ কারণ ছাড়া ভোট দিতে ব্যর্থ ব্যক্তিদের জরিমানা দিতে হয়।

পেরু: ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি ছাড়া সবার জন্য ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। ভোট না দিলে কর্তৃপক্ষ জরিমানা করতে পারে। এছাড়াও বহু নাগরিক সুবিধা বাতিল করা যেতে পারে।

সামোয়া: ২০১৮ সালে ভোটদান বাধ্যতামূলক করার আইন করেছিল। ২০২১ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রথম এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। ২১ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের অবশ্যই ভোট দিতে হবে, ব্যর্থ হলে জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও ওশেনিয়া মহাদেশের দেশটিতে উল্লিখিত বয়সের নাগরিককে অবশ্যই ভোট দিতে হয়।

সিঙ্গাপুর: সিঙ্গাপুরে ভোট দিতে ব্যর্থ হলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে। তবে কোভিড -১৯ মহামারি চলাকালে সিঙ্গাপুর সরকার বিচ্ছিন্ন বা কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের ছাড় দিয়েছিল